Tuesday, June 5, 2007

আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করা যাবে না

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অতি পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর একটি। বিভিন্ন গণআন্দোলন, গণঅভ্যূত্থান থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান করেছে এই দলটি। প্রতিষ্ঠাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক বার একে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম সফলতম দল যার জন্ম ক্ষমতার বাইরে থেকে। যে কারনে ১৯৭১, ১৯৭৫, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হলেও তা চরমভাবে ব্যর্থ হয়। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দলের শক্তির উৎস দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এর শক্ত ভিত্তি।

২০০১ সালের নীলনকশার নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে সাম্প্রদায়িক বিএনপি-জামাত জোট। তারা ক্ষমতায় এসেই শুরু করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন। দুর্নীতিতে ছেয়ে যায় দেশ। খুন, হত্যা, রাহাজানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশে জঙ্গি হামলা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বদৌলতে অতীতের সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। বাংলা ভাই দেশের একটি অঞ্চলে সরকারি প্রশাসনের সমান্তরাল একটি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যন্ত বিকৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতি ছিল দেশে ওপেন সিক্রেট। এসবের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যেত না।

আওয়ামী লীগ টানা পাঁচটি বছর এসবের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে এসেছে। বিএনপি-জামাত জোট জানত পরবর্তী নির্বাচনে এদেশের জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সকল দুর্নীতি, দলীয়করণ, সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেবে। তাই তারা ইলকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অপকৌশল শুরু করল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সহ বিরোধী দলীয় জোট এইসব মোকাবেলা করে চারদলীয় জোটের সকল কূটকৌশল ছিন্নভিন্ন করে দেয়। সবাই আশা করেছিলো এবারে একটি সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দমতো সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।

কিন্তু বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার যে নীতি গ্রহন করেছেন তা হলো রাজনীতিকেই ধ্বংস করা। এই ব্যবস্থাটাকেই ভেঙে ফেলা। সেনা সমর্থিত এই সরকার চায় নিজেদের পছন্দসই এবং নিজেদের হাতে গড়া কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের যোগ্য করা এবং অন্য বড় দলগুলোকে ভেঙে ফেলা। বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমন করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাল চালছে। কাউকে ধরা হচ্ছে আবার কাউকে ধরা হচ্ছে না। ব্যালেন্স রক্ষার নামে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের সাথে যারা বিগত পাঁচ বছর আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঘরোয়া রাজনীতি চালুর কথা বলাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলকে আটক করা হয়েছে। অথচ দেশের জনগণই ঠিক করবে কোন দল দেশের রাজনৈতিক ময়দানে থাকবে আর কোন দল থাকবে না। এটা সম্পূর্ণভাবে জনগণের উপরই নির্ভর করে।

অনেকে বলেন বা ধারণা করেন, খালেদা জিয়া যেহেতু দেশ ছাড়তে বা রাজনীতি হতে অবসর নিতে পারেন সেহেতু আরেক নেত্রী শেখ হাসিনাকেও একই কাজ করতে হবে বা হতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, প্রথমোক্ত নেত্রী দূর্নীতি, দলীয়করণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এর সাথে যুক্ত। ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমানের সর্বগ্রাসী দূর্নীতিতে তিনি কোনো বাধাই দেননি। জনগণ তাঁকে প্রত্যখ্যান করেছে। এমনকি তাঁর শরিক দল জামায়াতে ইসলামীও তাঁর দলের দূর্নীতির দায়ভার নিতে নারাজ।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা গত পাঁচ বছরে বিগত সরকারের সকল দূর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। গত পাঁচ বছরে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রাম করেছেন তিনি। ২১শে আগষ্ট তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৬ সালের শেষদিকে তাঁর নেতৃত্বে যে আন্দোলন পরিচালিত হয় তারই ফসল বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার।

পরিশেষে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ বিএনপির মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয়। এর শেকড় অনেক গভীরে। এটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। অতীতে বারংবার চেষ্টা করেও এর কোনও ক্ষতি করা যায় নি, ভবিষ্যতেও যাবে না।

No comments: